ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): আজ মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সরকারের বাধা দেওয়ার আশঙ্কা থেকেই নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে আগে থেকে জড়ো হন। এর আগে বিএনপি কার্যালয় পরিদর্শনে আসেন এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ।
ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে নয়াপল্টনে জমায়েত হওয়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে গত বুধবার পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ওইদিন সন্ধ্যায় পুলিশ দলটির কার্যালয়ে অভিযানও চালায়। আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেককেই।
১০ ডিসেম্বরের আগেই নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়ো হওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘অনেকেই বলেন ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ হওয়ার কথা কিন্তু আগেই লোকজন কেন জমায়েত হলো?’
‘আসলে এই সরকারকে কেউ বিশ্বাস করেনা। কারণ অতীতে আমাদের বিভিন্ন সমাবেশে তারা নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। বাধা দিয়েছে। সেই আশংকা থেকেই নেতাকর্মীরা আগে থেকেই জড়ো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার সমাবেশে যোগ দিতে আসা ঢাকার বাইরের ৯৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার রাতে মাগুরা জেলা বিএনপির সভাপতি আলী আহমদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইশরাক হোসেনের গোপীবাগের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভাংচুর করেছে। বাসার দারোয়ানকে আটক করেছে। এমনকি বাসার সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলেছে।’
নজরুল ইসলাম খান আরো জানান, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান মোসাব্বিরকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। তাকে তার স্ত্রী নাশতা দিয়ে এসেছে। পরদিন থেকে তার কোনো সন্ধান মেলেনি। নেত্রকোনা আতাউর রহমানের কোনো সন্ধান মিলেছে না। তারা ঢাকার সমাবেশে যোগ দিতে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘এই সরকার সভা সমাবেশ করার পরিবেশ দিচ্ছে না। তারা সকল সাংবিধানিক অধিকার হরণ করছে। বিএনপি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছে। কারণ এই সরকার গণতন্ত্রকে কবরে নিয়ে গেছে।’
বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানকে ‘মধ্যযুগীয় বর্বরতার’ সঙ্গে তুলনা করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘পুলিশ যে ধরণের অস্বাভাবিক ও মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালিয়েছে তা কোনো সভ্য সমাজে কাম্য নয়।’
কার্যালয়ে বিভিন্ন কক্ষে ভাংচুর ও তছনছ করার অভিযোগ করে নজরুল বলেন, ‘পুলিশ আমাদের দলের চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবের কক্ষসহ সবকিছু ভাংচুর ও তছনছ করেছে।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘পুলিশ নিজেরাই ব্যাগ নিয়ে বোমা রেখে বিএনপি অফিসে বোমা থাকার নাটক সাজিয়ে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। অনেক সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের অনেকেই অসুস্থ।’
‘কোনো দলের কার্যালয়ে এমন অভিযান ও লুটপাট কখনো দেখিনি। আসলে সরকার অস্থিরতায় ভুগছে। সরকার দেশটাকে খেলায় পরিণত করেছে। আমরা তাদেরকে এমন নোংরা খেলা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, বর্তমান নেতা মো. ইয়াছিন আলী, মো. নাজমুল হাসান, ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, নিখোঁজ থাকা স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান মোসাব্বিরের সহধর্মিণী ও ছেলে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে নজরুল ইসলাম খান বিএনপির দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়ে এলডিপিসহ যারা সহমর্মিতা জানিয়েছেন তাদেরকে স্বাগত জানান। পরে এলডিপি নেতৃবৃন্দকে নিয়েই সংবাদ সম্মেলন বসেন তিনি।
এসময় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, কেন্দ্রীয় নেতা কাজী রওনকুল ইসলাম টিপু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এলডিপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছেলেন নেয়ামুল বশির, আওরঙ্গজেব বেলাল, মোর্শেদ, সাকলায়েন, কফিল উদ্দিন, আবুল হোসেন ভুঁইয়া, হাফিজুর রহমানসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
Leave a Reply